দ্বীনের মূল উৎস আল্লাহর ‘কালিমা’। এ কালিমা এত ব্যাপক-বিস্তৃত, গভীর ও অপরিসীম যে, দুনিয়ার সব সমূদ্র যদি কালির রূপ নেয়, আর তা দিয়ে আল্লাহর কালিমা বা বাণী লেখার চেষ্টা করা হয়—অচিরেই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে, কিন্তু রবের কালিমা বা কালাম লিখে শেষ করা যাবে না। (সূরা কাহফের ১০৯ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)
এ কালামই বান্দার ওপর ‘কুরআনে কারীমে’ গ্রন্থবদ্ধ করে নাযিল করা হয়েছে। কুরআনের সাথে সাথে এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুবারক সুন্নাহ।
কুরআন-সুন্নাহর অসীম ও চিরসজীব অর্থ, ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য রচনা করতে গিয়ে চৌদ্দশত বছর উম্মাহর শতসহস্র কলমের কালি ঝরেছে। গড়ে উঠেছে ইসলামী উলুমের বিশাল লাইব্রেরি। এই হলো আমাদের ইলমী ‘তুরাস’ বা Tradition, ঐতিহ্য বা মিরাস।
আমাদের এই ‘তুরাসের’ বিশালতা ও গভীরতা অকল্পনীয়। জ্ঞানচর্চার ইতিহাসের এর তুলনা হয় না। এই তুরাস সংরক্ষিত হয়েছে হস্তলিখিত বই বা পাণ্ডুলিপিসমূহে।
ছাপাখানার আবিষ্কারের পর হাজারো কিতাব মুদ্রিত হয়েছে। এখন বই বা কিতাব বলতে আমাদের চিন্তায় শুধু মুদ্রিত বইয়ের চিত্রই আসে। অথচ ইসলামী ‘তুরাস’ এত বিশাল যে, কয়েকশ বছরের মুদ্রণে এর বিশভাগের একভাগও ছাপানো সম্ভব হয়নি। অমুদ্রিত রয়ে গেছে হাজারো পাণ্ডুলিপি। যা ছেপে এসেছে তার ক্ষেত্রেও অনেক কারণে মূল পাণ্ডুলিপির শরণাপন্ন হবার প্রয়োজন রয়ে গেছে।
পাণ্ডুলিপির আরবী প্রতিশব্দ- মাখতুত। মাখতুতের বিভিন্নমুখি খেদমতের জন্য ‘মুআসসাসাতুল মাআরিফের’ প্রতিষ্ঠা ও ক্ষুদ্র পথচলা। ‘মুআসসাসা’ মানে ফাউন্ডেশন। মুআসসাসার রয়েছে একটি শক্তিশালী পরামর্শক কমিটি। যা আরব-আজমের বিশিষ্ট আহলে ইলমদের নিয়ে গঠিত।
মুআসসাসার খিযানায় প্রায় দুই শতাধিক মাখতুতাতের লাইব্রেরীর পূর্ণ বা আংশিক ডিজিটাল কপি সংগ্রহ হয়েছে। ডজনখানেক গবেষণা ও ‘তাহকীকের’ কাজও চলমান আছে। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের অনেকগুলো গ্রন্থাগারের সাথে সহযোগিতামূলক চুক্তিও হয়েছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সেও আল্লাহর ফযলে অংশগ্রহণের তাওফিক হয়েছে।
এ সবকিছুকে ‘শুরু’ও বলা মুশকিল। এ কাজের জন্য দরকার জানবায তালিবে ইলমদের বড়সড় একটি দল। দরকার হিম্মত, ফানাইয়ত ও নাশাতের এমন নিদর্শন, যা এই ‘তুরাস’ রচনাকারী আমাদের আকাবির-আসলাফের মেহনতের প্রতিচ্ছবি হতে পারে। দরকার অনেকগুলো জীবন, কমপক্ষে কয়েক শতাব্দীর মেহনত।
যুগে যুগে তুরাসে ইসলামীর বহুমুখী খেদমত হয়েছে। বর্তমানে সরসরি ‘উলূমূল মাখতুত’, ‘তাহকীকুল মাখতুত’ ও ‘তারমীমুল মাখতুত’-এর ওপরও ব্যাপক কাজ শুরু হয়েছে। এই সিলসিলায় যুক্ত হয়ে কিছু শূণ্যতা পূরণ করাই মুআসসাসার উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা সবাইকে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমাদেরকে ইলমের খাদিমদের কাতারে শামিল করুন।