এ বিষয়ে হযরত মাওলানা সাঈদ আযীমপুরী দামাত বারাকাতুহুমের পক্ষ থেকে মতপ্রকাশের জন্য একটি রিসালা আসে (১৫ই রজব, ১৪৪৫)। হযরত বর্তমানে মুকাদ্দিমাতুশ শাইখ দেহলবী রহিমাহুল্লাহর ওপর একটি ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচনা করছেন। আলহামদুলিল্লাহ, তিনি জানিয়েছেন, কাজ মোটামুটি শেষ।
উক্ত রিসালার শুরুতে লেখক শাইখ দেহলবী রহ. রিজালুল মিশকাতের ওপর নিজের রচনাকে “আল-ইকমাল ফী আসমাইর রিজাল” বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে দেহলবী রহ. নিজের তাসনীফাতের যে ফেহরেস্ত বা সাবাত লিখেছেন, যার নাম “তালীফুল কলবিল আলীফ…”—তাতে এ বিষয়ে নিজের রচনাকে “আসমাউর রিজাল ওয়ার রুয়াতিল মাযকুরীন ফি কিতাবিল মিশকাত” বলে অভিহিত করেছেন।
রিসালার উক্ত স্থানের টীকায় বিষয়টি উঠে আসে যে, এ সংক্রান্ত শাইখ রহ.-এর রচনা একটিই নাকি দুটি? শাইখ দেহলবী রহ.-র জীবনী ও কারনামার ব্যাপারে ড. খলীক আহমদ নিযামী রহ. রচিত বইটি আহলে ইলমের নিকট ব্যাপকভাবে সমাদৃত। ড. নিযামী রহ. ও পরবর্তী আরো কয়েকজন লেখক উপরোক্ত বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপনা করেছেন, যা থেকে মনে হয়, রিজালুল মিশকাত বিষয়ে শাইখ দেহলবী রহ.-র দুটি কিতাব রয়েছে। জনাব ইসহাক ভাট্টি রহ. ‘ফুকাহায়ে হিন্দ’ (২: ১৮৩) বইয়ে বিষয়টি এমনই উল্লেখ করেছেন। একে তো মুসান্নিফের কলমেই নামের দ্বৈততা, অপরদিকে মাখতুতাতের ফিহরিসগুলোতেও একাধিক নাম, অতঃপর নকল দর নকল—সবমিলিয়ে বিষয়টিতে বিভিন্ন ধরনের সংশয় তৈরী হয়।
উস্তাদজী সাঈদ সাহেব দামাত বারাকাতুহুমের মুরাসালার ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়ে একটি উড়ন্ত ও ক্ষুদ্র মুরাজাআ করা হয়, যার খোলাসা উস্তাদজীর কাছে এভাবে পাঠানো হয় (পরের দিন, ১৬ই রজব)।
প্রথমত:
যারা ‘আলইকমাল’ ও ‘আসমাউর রিজাল’-কে ভিন্ন দুটি কিতাব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যেমন খলীক নিযামী ও ইসহাক ভাট্টি রহ.- তারা যুবাইদ সাহেবের হাওয়ালা দিয়েছেন।
যুবাইদ সাহেবের কিতাব (The Contribution of India to Arabic Literature) দেখে বুঝে আসে, তিনি মূলত এক কিতাবের কথাই দুই নামে দুই স্থানে উল্লেখ করেছেন। উনার ধারণা অনুযায়ী দুটি একই কিতাব। কারণ-
১) ৫১ নং পৃষ্ঠায় যুবাইদ সাহেব রুয়াতের জীবনী সংক্রান্ত হিন্দুস্তানী তাসানীফের তালিকায় শাইখের ‘আসমাউ রিজালি মিশকাতিল মাসাবীহ’-র কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে ২৫৬ নং পৃষ্ঠায় শাইখের তাসানীফের তালিকায় ‘আলইকমাল ফি আসমাইর রিজাল’ উল্লেখ করেছেন। যদি দুটি ভিন্ন কিতাব হতো, উভয় স্থানে উভয় নামই আসা দরকার ছিল। ছবি, যুবাইদ সাহেবের বই: পৃ নং ৫১:
ছবি, পৃ নং ২৫৬:
২) বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়, তিনি ‘ফিহরিসু আসমাইল কুতুবে’ উভয় নাম উল্লেখ করেছেন (আলইকমাল ও আসমাউ রিজালি…)। উভয়টিতেই একই পৃষ্ঠা নং উল্লেখ করেছেন (৫১ ও ২৫৬)। অর্থাৎ উনার মতে দুটি একই কিতাব।
ছবি- ১:
ছবি- ২:
৩) খলীক নিযামী রহ. বিষয়টিকে দুই কিতাবের মত উপস্থাপন করেছেন, আবার উভয়টির পর একই মাকতাবা (বাঙ্কিপুর) উল্লেখ করেছেন। বাহ্যত মাকতাবা সংক্রান্ত মালুমাত তিনি যুবাইদ সাহেব থেকে নিয়েছেন। কিন্তু যুবাইদ সাহেব যে একই নুসখা/মাখতুতের দিকেই দুটি নামকে ইহালা করেছেন, বিষয়টি হয়তো খলীক সাহেব খেয়াল করেননি।
দ্বিতীয়ত:
নিশ্চিত হবার জন্য ‘আলইকমাল’-এর যে মাখতুতার কথা যুবাইদ সাহেবের হাওয়ালায় এসেছে (দিল্লী: ১০৫ ও বাঙ্কিপুর: ৭৩২) সেগুলোর খোঁজ নেয়া হয়। মাখতুতা এখনো (এই লাইন লেখা পর্যন্ত) হাতে না আসলেও নিম্নের বিষয়গুলো সামনে আসে-
১) কুতুবখানা নাসেরিয়্যাহ লখনৌ (৩৯)-এর নুসখার শুরু-শেষ দেখা হয়। নুসখাটি “অসমাউর রিজাল”-এর নুসখা হিসেবে পরিচিত। মলাটেও কাছাকাছি এভাবে নামকরণ করা হয়েছে (ডানের ছবি)। ভূমিকায় শাইখ কিতাবটির কোনো নামকরণ করেননি, তবে শেষদিকে এভাবে লিখেছেন,
لمّا ألّف كتاب لمعات التنقيح… كمّله بذكر أسماء الرّجال
কিতাবের শুরুর ইবারত:
২) বৃটিশদের প্রস্তুতকৃত বাঙ্কিপুর মাকতাবার মূল ইংরেজী ক্যাটালগ দেখা হয় (Catalogue of the Arabic and Persian Manuscripts in the ORIENTAL PUBLIC LIBRARY at Bankipur)। ১২ নং খন্ড মুইনুদ্দীন নদভী প্রস্তুত করেছেন। এটির পৃ. ৬৯-৭০-তে যুবাইদ সাহেবের সেই মাখতুতার উল্লেখ রয়েছে। মাখতুতার শুরু-শেষও উল্লেখ করা হয়েছে, যা নাসেরিয়্যাহর নুসখার সাথে পুরোপুরি মিলে যায়। ছবি:
নাসেরিয়্যাহর নুসখার সাথে মিলে যাওয়া ছাড়াও আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। খলীক নিযামী রহ. লিখেছেন, “আসমাউর রিজাল ওয়ার রুয়াত…”-এর নুসখা বাঙ্কিপুরে আছে। কিন্তু বাঙ্কিপুরের ক্যাটালগের জীবনী সংক্রান্ত খন্ডে শাইখ আবদুল হক রহিমাহুল্লাহর দিকে মানসুব শুধু উপরোক্ত কিতাবটিই আছে। “আসমাউর রিজাল ওয়ার রুয়াত…”-নামে কোনো কিতাব নেই। এ থেকেও বোঝা যায়, কিতাব একটিই; শুধু নুসখার বিবরণীতে ভিন্ন নাম এসেছে, আর সেটা নকল করেছেন যুবাইদ সাহেব।
৩) বাকি রইল ‘আলইকমালের’ দিল্লীর ১০৫ নং মাখতুতা। এটির একটি মুসাওয়ারা মারকাযুল মালিক ফয়সাল-এ আছে (رقم التسلسل: 123547)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মালিক ফয়সালের কায়েদাতুল বায়ানাতে মাখতুতার নামকরণ করা হয়েছে “আসমাউ রিজালি মিশকাতিল মাসাবিহ”। এ থেকেও অনুমিত হয় যে, কিতাব একটিই।
এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত হতে হলে বৃটিশ লাইব্রেরীর সংশ্লিষ্ট অংশের ফাহারিস এবং মাখতুতার শুরু-শেষ কিছু নমুনা দেখতে হবে, যা এখনো দেখা হয়নি।
এতটুকু লেখার পর, মারকাযুল মালিক ফয়সাল থেকে দিল্লীর নুসখাটির মুসাওয়ারার কিছু নমুনা পৌঁছে, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এটি উপরোক্ত “আসমাউর রিজাল” কিতাবটিই, ভিন্ন কোনো কিতাব নয়। মলাটের ছবির একাংশ:
ভেতরে একই কিতাব। শুরুর ইবারতের ছবি (নাসেরিয়্যাহ ও বাঙ্কিপুরের নুসখাদ্বয়ের মত):
সবমিলিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, কিতাব মূলত একটিই। মুসান্নিফ রহ. প্রণীত ‘তালিফুল কলবিল আলীফ’ বা ‘নুযহাতুল খাওয়াতির’-এ যেমন আছে। কিন্তু মুসান্নিফ/ নাসিখ/ মুফাহরিসের পক্ষ থেকে একই কিতাবের বিভিন্ন নাম উল্লেখ করায় সংশয় তৈরী হয়েছে। যেমনটি প্রায় মাখতুতায় হয়ে থাকে।
মুরাজাআর তাসালসুল সাদামাটাভাবে উল্লেখ করে দিলাম, পরের তথ্যগুলো আসার পর আর সাজাইনি। (মুহাম্মদ তাকি, ১৬ই রজব, ১৪৪৫)